আক্বীদা

প্রিয় নবী (সা.)-এর মর্যাদা

মূল: মুজাদ্দিদে আলফে সানী শায়খ আহমদ সিরহিন্দী
অনুবাদ : শাহ মোহাম্মদ মুতী আহমদ আফতাবী

নিশ্চয় মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) আদম সন্তানদের সরদার। রোজ কিয়ামতে তাঁর অনুগামীর সংখ্যা অধিক হবে এবং পূর্র্ব-পরবর্তী সকলের চেয়ে আল্লাহ তাআলার নিকট তিনিই অধিক সম্মানী হবেন। তিনি সর্বাগ্রে শাফাআত করবেন ও তাঁরই শাফায়াত সর্বপ্রথম কবূল হবে। তিনিই সর্ব প্রথম বেহেশতের দ্বারে করাঘাত করবেন এবং তাঁরই জন্য দরজা খুলে দেয়া হবে। রোজ কেয়ামতে প্রশংসার পতাকা তিনিই উত্তোলন করবেন। হযরত আদম (আ.) ও তৎপরবর্তী সকলেই তাঁর পতাকার নিচে অবস্থান করবেন।

তিনি ঐ মহান ব্যক্তি যিনি বলেছেন যে, ‘আমরা পরবর্তী, অথচ কেয়ামতে আমরাই অগ্রগামী! এতে কোন গৌরব নেই, এবং আমি আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তি ও রাসূলগণের অগ্রগামী, এতেও কোন গৌরব নেই এবং আমিই শেষনবী, এটা অহংকার নয়; আবদুল মুত্তালেবের পুত্র আব্দুল্লাহ এবং তাঁর সন্তান আমি মুহাম্মদ (সা.)।’
“নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মানব জাতি সৃষ্টি করে উৎকৃষ্ট ভাগে আমাকে রেখেছেন। এরপর তাকে দুই দলে বিভক্ত করে উৎকৃষ্ট দলে আমাকে রেখেছেন। এরপর তাদেরকে বহু সম্প্রদায়ে বিভক্ত করেছেন এবং আমাকে শ্রেষ্ঠতর সম্প্রদায়ে রেখেছেন, তারপর তাদেরকে ঘরে ঘরে বিভক্ত করে উৎকৃষ্ট ঘরে আমাকে রেখেছেন, সুতরাং আমি তাদের সকলের মধ্য হতে ব্যক্তি হিসাবে উৎকৃষ্ট এবং ঘরের বিবেচনায় উৎকৃষ্ট।

যখন সকলেই সমাধি হতে উত্থিত হবে, তখন আমি সর্বাগ্রে উঠব, এবং তারা যখন দলবদ্ধ হবে, তখন আমিই তাদেরকে আল্লাহ তাআলার নিকট নিয়ে যাব। সকলেই যখন নির্র্বাক, হতভম্ব হবে, তখন সকলের পক্ষ হতে আমিই আল্লাহ তাআলার সাথে কথোপকথন করব। তারা যখন আবদ্ধ হবে তখন আমিই তাদের সুপারিশ করব এবং যখন তারা নিরাশ হবে তখন আমিই আশা প্রদান করব। সকল প্রকারের বুযুর্গী, সম্মান এবং যাবতীয় কুঞ্জিকা সেদিন আমার হাতে ন্যস্ত থাকবে, এবং প্রশংসার পতাকাও আমার হাতে থাকবে। আল্লাহ তাআলার নিকট আদম বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মানী আমি হব। আমার চারপাশে গুপ্ত ডিম্ব সদৃশ (শুভ্র) সহস্র ভৃত্য ঘুরতে থাকবে। যখন কিয়ামতের দিন আসবে তখন আমি নবীগণের ইমাম হব এবং তাদের পক্ষ হতে আল্লাহ তাআলার নিকট কথোপকথনকারী ও শাফাআতকারী হব। এটি অহংকার নয়।”

তিনি না হলে আল্লাহ-সুবহানাহু কিছুই সৃষ্টি করতেন না এবং স্বীয় রবুবিয়তের পরিচয়ও দিতেন না। তিনি ঐ সময় হতেই নবী ছিলেন, যখন আদম (আ.) মৃত্তিকা সলিলরূপে ছিলেন।
পাপ ঋণাবদ্ধ নাহি রবে কোন জান,
যাদের দলপতি সেই মহাজন (সা.)।

অতএব নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল বাশার বা মানব সরদার এ পয়গাম্বর (সা.) কে যারা মেনে নিয়েছেন, তারাই সকল উম্মতের শ্রেষ্ঠ এবং তাদের জন্যই আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “তোমরা উৎকৃষ্ট উম্মতরূপে নির্বাচিত হয়েছ।” পক্ষান্তরে যারা তাঁকে অমান্য করেছে, তারা আদম বংশের নিকৃষ্টতম। আল্লাহর বাণী ‘আরবরাই কুফর ও মুনাফিকীতে অতি কঠিন” পূর্বোক্ত বক্তব্যের অবস্থা জ্ঞাপক। কোন সৌভাগ্যশালী ব্যক্তির ভাগ্যে তাঁর সুন্নতের অনুসরণ লাভ হবে, এবং তাঁর শরীআতের পায়রবী করে কে যে ছরফুরাজ হবে, তা আল্লাহ তাআলাই জানেন। যৎসামান্য আমল যা তাঁর সত্য ধর্মের প্রতি বিশ্বাসের সাথে সংশ্লিষ্ট, তাই আজ প্রচুর আমলের পরিবর্তে গৃহীত হবে।

আসহাবে কাহাফ মাত্র একটি নেকীর কারণে বৃহত্তর মর্যাদা প্রাপ্ত হয়েছিলেন; তা এই যে, তাঁরা আল্লাহর দুশমনদের প্রাবল্যের সময় তাদের কবল হতে ঈমান রক্ষার্থে বিশ্বাস ও ঈমানের নূর নিয়ে স্বদেশ পরিত্যাগ করেছিলেন।

শত্রুগণের সামনে সিপাহীগণ যদি সামান্য সাহস-হিম্মত প্রদর্শন করে, শান্তির সময় এ থেকে বহুগুণ অধিক বীরত্ব প্রদর্শন হতেও তা মূল্যবান হয়ে থাকে।
অথচ যখন নবী করীম (সা.) আল্লাহ তাআলার মাহবুব বা প্রিয় ব্যক্তি, তখন তাঁর অনুসরণকারীগণও নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার মাহবুব হবেন; কেননা আশিক স্বীয় মাশুকের আচার ব্যবহার যার মধ্যে অবলোকন করে তাকেই ভালবাসে। তাঁর বিরোধীগণকেও এর উপর তুলনা করে বুঝা উচিত।
সৃষ্টির সম্মান যিনি, নাম-মুহাম্মদ (সা.)
তিনিই সৃষ্টির আর মোদের-সম্পদ
হবে না মৃত্তিকা যারা তাঁর দুয়ারে-
মৃত্তিকা পড়–ক সদা মস্তকে তাদের।

বাহ্যিক হিজরতের যদি সুযোগ না হয়, তবে অভ্যন্তরীণ হিজরতের প্রতি পূর্ণ দৃষ্টি রাখা কর্তব্য। যেন তাদের সঙ্গে আছে, অথচ নেই। হয়তো এর পর আল্লাহপাক কোন সুযোগ দিতেও পারেন।
নতুন বৎসর আরম্ভ হয়েছে। আমি জানি যে, এসময় তথাকার নিবাসীগণের কার্যকলাপ আপনাকে ব্যতিব্যস্ত রাখে। যদি আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা সহায়তা করে তবে আশা রাখি যে, এই হাঙ্গামা শেষ হলে আপনার সাথে সাক্ষাত হবে। অতিরিক্ত লিখা বিরক্তির কারণ। আল্লাহ তাআলা আপনাকে আপনার পূর্ব-পুরুষগণের সুদৃঢ় পথে অটল রাখুন। আপনার প্রতি ও তাঁদের প্রতি কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার শান্তিধারা বর্ষিত হোক।

[হযরত শাহ মোহাম্মদ মুতী আহমদ আফতাবী অনূদিত, মুজাদ্দিদে আলফে সানী শায়খ আহমদ সিরহিন্দী (র.) এর ‘মকতুবাত শরীফ’ থেকে সংকলিত; এটি শেখ ফরিদ (র.)-এর নিকট লিখিত পত্র, মকতুব নং ৪৪]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *