সংবাদ

যুক্তরাজ্যে মাওলানা কবি রূহুল আমিন খানকে সংবর্ধনা

সূফি মহাকবি আল্লামা জালালুদ্দীন রূমী (র.)’র ফার্সি ভাষায় রচিত মসনবী শরীফের বাংলা কাব্যানুবাদ সম্পন্ন করেছেন মাওলানা কবি রূহুল আমিন খান। এ উপলক্ষ্যে গত রোববার যুক্তরাজ্যে তাকে রাজকীয় সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। এই প্রথম মসনভির ধারাবাহিক কাব্যানুবাদের মাধ্যমে বাংলা ভাষায় রূমীর পূর্ণ অভিষেক হলো। মাওলানা কবি রূহুল আমিন খান দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাকালীন নির্বাহী সম্পাদক ও মসজিদে গাউসুল আজম ঢাকার খতিব। বহু ইসলামি, ঐতিহাসিক ও কাব্যগ্রন্থ প্রনেতা, বয়োজেষ্ঠ্য সাংবাদিক, সূফি কবি ও পন্ডিত মাওলানা রূহুল আমিন খানকে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে অবস্থিত বৃহৎ ইসলামি মারকাজ সিরাজাম মুনিরা অ্যাডুকেশন সেন্টার বর্ধিত কলবরে এই সংবর্ধনা প্রদান করে।
সিরাজাম মুনিরা অ্যাডুকেশন সেন্টারের পরিচালক আলহাজ মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংবর্ধিত ব্যক্তি মাওলান কবি রূহুল আমিন খান, বিশেষ মেহমান ছিলেন আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কলার ও হাফিজুল হাদিস, সিরাজাম মুনিরা অ্যাডুকেশন সেন্টারের প্রিন্সিপাল শায়েখ ফাদি জোব্বাহ সিরায়া, উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান ও পরিচালনায় ছিলেন সিরাজাম মুনিরা অ্যাডুকেশন সেন্টারের পরিচালক আলহাজ হাফিয সাব্বির আহমদ।
অনুষ্ঠানে মসনবী শরীফের বাংলা কাব্যানুবাদকারী মাওলানা কবি রূহুল আমিন খান বলেন, আল­ামা জালালুদ্দীন রূমী (র.) ছিলেন একজন আলেম, ফকিহ। আধ্যাত্মিক সাধক শামসে তাবরিজির সান্নিধ্য তাকে মহান সূফি ও মহাকবিতে পরিনত করে। আউলিয়া পিতা বাহাউদ্দিন ওয়ালাদের সান্নিধ্য তাকে ছোট্টকাল থেকেই শরীয়ত ও মারেফতের জন্য প্রস্তুত করে তুলেছিল। বাল্যকালে পিতার সাথে রূমীকে দেখে আউলিয়া কবি ফরীদুদ্দীন আত্তার বলেছিলেন আমি ‘হৃদের পেছনে সমুদ্র দেখতে পাচ্ছি’। পরিনত বয়সে এই গুপ্ত সমুদ্রের বিস্ফোরণ ঘটে দরবেশ শামসে তাবরিজির সান্নিধ্যে। এই দরবেশের রহস্যময়তা, অলৌকিকতায় রূমীর জীবন পরম স্বত্তার প্রেমে ব্যাকুল হয়ে উঠে। ভাবের সাগরে উন্মাতাল রূমী এসময় রাতভর আধ্যাত্মিক কবি ফরীদুদ্দীন আত্তার ও হাকিম সানায়ীর আধ্যাত্মিক কবিতা শুনতেন ও চোখের পানি বিসর্জন দিতেন। এক সময় তিনি নিজে কবিতা আবৃত্তি শুরু করেন এবং তার শিষ্যরা তা লিখে রাখেন। এইভাবেই দীর্ঘ ১৫ বছর সময়ে মসনভি শরীফ লিখিত হয়। মসনভি শরীফ সম্পর্কে কবি আব্দুর রহমান জামি বলেন, ‘মৌলভীয়ে মসনভিয়ে মা’নবী, হাস্তে কুরআন দরজবানে পাহলভি’ অর্থ্যাৎÑ মাওলানা রূমীর মসনভি শরীফ (পাহলভি) ফার্সি ভাষার কুরআন। মসনভি শরীফকে কুরআনের ভাবান্তরও বলা হয়ে থাকে।
মাওলানা কবি রূহুল আমিন খান বলেন, রূমির মসনভি শরীফ এত বেশি পঠিত হয়েছে যে পৃথিবীতে কোন কবিতার বই তার ধারে কাছেও যেতে পারেনি। মাওলানা রূমির মসনভি সারা পৃথিবীকে আলিঙ্গন করেছে। এর রস শুধু মুসলমানরাই নয় পৃথিবীর সকল ধর্মের মানুষ আস্বাদন করেছে। ২০০৭ সালকে জাতিসংঘ রূমী বর্ষ হিসেবে পালন করেছে। পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ পৃথিবীর সকল মেরুতেই রূমির মসনভি সমাদৃত। রূমির মসনভি পাঠ মানুষের অশান্ত আত্মাকে প্রশান্তিতে ভরিয়ে তুলে। রূমির দর্শন উৎস থেকে বিযুক্ত মানুষকে স্রষ্টার সাথে সংযুক্ত করে দেয়। প্রতিপালকের সাথে তার বান্দার মুলাকাত করানোই ছিল তার তরিকার মূল দর্শন।
সিরাজাম মুনিরা অ্যাডুকেশন সেন্টার বার্মিংহামের প্রিন্সিপাল শায়েখ ফাদি জোব্বাহ সিরায়া বলেন, মানুষ তাকওয়া অর্জন করলে, প্রকৃত খোদাভীরু হলে আল­াহ তার জিম্মাদার হয়ে যান। তাওয়াক্কালতু আলাল­াহ বা আল­াহর উপর যারা নির্ভর করেন আল­াহ তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করেন। সুফি, অলি দরবেশরাই প্রকৃত তাকওয়াকারী ছিলেন।
সিরাজাম মুনিরা অ্যাডুকেশন সেন্টারের পরিচালক আলহাজ হাফিয সাব্বির আহমদ বলেন, আল­ামা জালালুদ্দীন রূমী (র.) একজন সূফি ও আধ্যাত্মিক কবি ছিলেন। তার লিখিত মসনভি শরীফ শতাব্দীর পর শতাব্দী মানুষের অন্তরকে সিক্ত করে চলেছে। আল­াহর ওলির যবান থেকে বেরুনো এই অলৌকিক পংক্তিমালা লক্ষকোটি মানুষকে কয়েক শতাব্দী ধরে প্রেমের শরাব পান করিয়ে আসছে। মানুষের অন্তরে স্থান করে নেয়া এই মসনভি শরীফকে বাংলাভাষি মানুষের তৃপ্তি মেটাতে সাতশ বছর পর এই প্রথম আরেক সূফি, বাঙালি কবি আল­ামা রূহুল আমিন খান (ধারাবাহিক) কাব্যানুবাদ শুরু করেছেন। প্রথম খন্ডের অনুবাদ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাংলা ভাষায় অনুবাদের বদৌলতে বাংলাভাষিরা এর প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করার সুযোগ হলো। তিনি এই মহানকর্ম, অনুবাদের মহাযজ্ঞ সম্পন্ন করায় কবি রূহুল আমিন খানের প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন।
সংবর্ধনা সভায় সিরাজাম মুনিরা জামে মসজিদ ও অ্যাডুকেশন সেন্টারের পক্ষ থেকে মাওলানা কবি রূহুল আমিন খানকে কাবা শরীফের গিলাফ উপহার দেন সিরাজাম মুনিরার পরিচালক আলহাজ মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, সিরাজাম মুনিরা অ্যাডুকেশন সেন্টার গুনীজনকে এইভাবে সম্মাননা প্রদান করে থাকে। গুণী মানুষের নেক নজর, তাদের মহব্বত থাকলে একদিন এই সেন্টার এদেশে সূফি ইজমের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠবে।
কবি রূহুল আমিন খানকে লতিফিয়া অ্যাডুকেশন ট্রাস্ট, সিলসিলা ইসলামিক সোসাইটি কভেন্ট্রি, শামসুদ্দীন অ্যাডুকেশন ট্রাস্ট, আলহাজ আতাউর রহমান অ্যাডুকেশন ট্রাস্ট, ডা. কুতুব উদ্দিন অ্যাডুকেশন ট্রাস্টের পক্ষ থেকে উপহার সামগ্রী তুলে দেয়া হয়। পরে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
সংবর্ধনা সভায় উপস্থিত ছিলেন সিরাজাম মুনিরা জামে মসজিদ ও অ্যাডুকেশন সেন্টারের পরিচালক আলহাজ কাজী নান্নু মিয়া, আলহাজ মো. জসিম উদ্দিন, মো. ফয়সাল আহমদ, কারী আহমদ আলী, মো. গোলাম মাহফুজ, মো. মুদাসসির আহমেদ, মো. বাদশা মিয়া, মো. মোসতাকিম, হাফিজ রুহুল আমিন, মো. ফজলু মিয়া, মৌলভী মকবুল আলী, আলহাজ এমাদ উদ্দিন প্রমুখ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *