সংবাদ

সৈয়দ আবুল বশর মাহমুদ হোসেন তাঁর মহৎ কাজের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন: প্রধান বিচারপতি

তিনি ছিলেন বহুগুণের অধিকারী মহান ব্যক্তিত্ব: আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী

বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, মানুষ তার কাজের মাধ্যমেই স্মরণীয় হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ আবুল বাশার মুহাম্মদ মাহমুদ হোসেন তাঁর মহৎ কাজের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে গেছেন। বিচারকার্য পরিচালনার বাইরে তিনি বিভিন্ন বিষয়েও পারদর্শী ছিলেন৷ তিনি আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.)-এর বিখ্যাত গ্রন্থ দেওয়ানে গাউছিয়ার ইংরেজি ও বাংলা অনুবাদ করেন। তিনশত ষাট আউলিয়ার অন্যতম হযরত নাসির উদ্দীন সিপাহসালার (রহ.) এর বংশধর এই মহান ব্যক্তিত্বের জীবনী থেকে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করতে পারি।

আজ (২ আগস্ট, ২০১৮) বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এ.বি. মাহমুদ হোসেন এর ৩৪ তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে সৈয়দ এ.বি. মাহমুদ হোসেন স্মৃতি সংসদ আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন ও বহুগ্রন্থ প্রণেতা হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী। তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি মরহুম সৈয়দ আবুল বশর মাহমুদ হোসেন বহুগুণের অধিকারী এক মহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি সিলেট তথা বাংলাদেশের বহুল পরিচিত ঐতিহ্যবাহী সায়্যিদ পরিবারের সন্তান, হযরত নাসির উদ্দীন সিপাহসালার (র.)-এর অধঃস্তন বংশধর। তিনি জীবনের বাঁকে বাঁকে অনেক দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিটি অঙ্গনেই সফলতা ও ন্যায়-নিষ্ঠার স্বাক্ষর রেখেছেন। কর্মজীবনের শুরুর দিকে তিনি একজন দক্ষ আইনজীবি ছিলেন। পরবর্তীতে বিচারপতি এমনকি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতির পদও অলংকৃত করেছেন। একজন বিচারপতি হিসাবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তি হওয়ার পরও আমাদের মতো মানুষের নিকট তিনি ছিলেন এক দুনিয়াবিরাগী সূফী সাধক। অতি সাধারণ জীবনাচরণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা, জ্ঞানস্পৃহা, ব্যক্তিগত আমল-আখলাক এসব কিছুর কারণে তাঁর ব্যক্তিত্ব আমাদের কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ।

লিখিত বক্তব্যে আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী সাবেক প্রধান বিচারপতির সাথে তার বিভিন্ন স্মৃতিও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সৈয়দ আবুল বশর মাহমুদ হোসেন সাহেব উর্দু ও ফার্সি ভাষা ও সাহিত্যে অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। ঢাকা আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল হাদীস কোর্স শেষ করার পর তিনি আমাকে উর্দু সাহিত্যের উপর দু বছরের একটি বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করার জন্য বলেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমি দু বছরের আদিব ও আদিবে কামিল কোর্স সম্পন্ন করি। কোর্স সম্পন্ন করার পর তিনি আমাকে আল্লামা ইকবাল, গালিব, দরদ, আকবর এলাহাবাদী রচিত কবিতা পাঠ করার জন্য ডাকতেন। আমার মুখে কোনো কবির উর্দু, ফার্সি কবিতা শুনলে ঐ কবির আরো অনেক কবিতা তিনি নিজে পাঠ করতেন এবং এগুলোর ব্যাখ্যা করতেন। তাছাড়া আহলে তাসাওউফ বুযুর্গানে কেরামের অনেক কবিতা বিশেষত বুযুর্গানে তরিকতের উর্দু , ফার্সি কালাম তিনি পাঠ করে ব্যাখ্যা করতেন। তার লাইব্রেরিতে মাওলানা রুমী (র.)-এর মসনবী শরীফ, দিওয়ানে হাফিজ, দিওয়ানে আমির খছরু, আল্লামা ইকবালের ফার্সি কবিতা, গাউছে পাক হযরত মহি উদ্দিন জিলানী (র.)-এর ফার্সি ভাষায় রচিত দেওয়ানে গাউছিয়া ইত্যাদি ছিল। তিনি ফার্সি দেওয়ানে গাউছিয়ার বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলেন। পুস্তকখানা বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য। আমার নিকট এর একটি কপি সংরক্ষিত আছে। ফার্সি ভাষা ও সাহিত্যে এত দক্ষতা অর্জনের পরও তিনি ফার্সি সাহিত্য সর্ম্পকে আরো জ্ঞান লাভ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করতেন। … তিনি ইলমে হাদীস সর্ম্পকেও অবগত ছিলেন। গাড়িতে বসে ওযীফা তিলাওয়াত করতেন। নারিন্দা থেকে কোর্টের গেইট পর্যন্ত তাঁর গাড়িতে বসে পথ অতিক্রম করার সৌভাগ্য আমার কয়েকবার হয়। তখন দেখেছি তিনি গাড়িতে বসে জরুরী দোয়া কালাম পাঠ করার পর হিযবুল আজম ওযীফাখানা বের করে তিলাওয়াত করতেন।

সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এ.বি. মাহমুদ হোসেন এর সু-যোগ্য সন্তান ও সুপ্রিমকোর্ট এর হাইকোর্ট ডিভিশনের সিনিয়র বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন এর সভাপতিত্বে ও সৈয়দ এ.বি. মাহমুদ হোসেন স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যানঃ সিনিয়র আইনজীবি, এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতিঃ সিনিয়র আইনজীবি এ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট এর আপিল বিভাগের বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার, বিচারপ্রতি আব্দুল হাফিজ, বিচারপতি এনায়েত রহিম, বিচারপতি রেজাউল হক, বেরিষ্টার জমির উদ্দিন সরকার, এ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহম্মেদ, এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী এমপি, এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী, এ্যাডভোকেট এম এম আমিন উদ্দীন, এ্যাডভোকেট স.ম রেজাউল করিম ও সুপ্রিম কোর্ট মাজার মসজিদের খতিব মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী প্রমুখ ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *