সংবাদ
ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে দারুল কিরাতের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত
উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুযুর্গ শামসুল উলামা আল্লামা আবদুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.) প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কুরআন প্রশিক্ষণ বোর্ড দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্টের অনুমোদন ও তত্বাবধানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুই সহস্রাধিক কিরাত প্রশিক্ষণ সেন্টার চালু আছে। ইংল্যান্ডেও প্রায় অর্ধ শতাধিক সেন্টারে সামার স্কুল হলিডের সময় দারুল কিরাত কোর্সের আয়োজন করা হয়।
ম্যানচেস্টারের ঐতিহ্যবাহী শাহজালাল মসজিদ এবং ইসলামিক সেন্টারেও প্রতি বছর সামার হলিডের সময় দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট এর অনুমোদন ও সিলেবাস অনুসরণে প্রথম শ্রেণী থেকে ফাইনাল ক্লাস পর্যন্ত কিরাত শিক্ষা প্রদান করা হয়। ম্যানচেস্টারের বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা লংসাইটের শাহপরান মসজিদেও এবছর প্রথম বারের মত দারুল কিরাত কোর্সের আয়োজন করা হয়। ঐতিহ্যবাহী এই দুই মসজিদে ২০১৯ সালের সামার হলিডের সময়ে আয়োজিত এ কিরাত কোর্সের সমাপনী উপলক্ষে গত সোমবার (২রা সেপ্টেম্বর) শাহজালাল মসজিদের হলরুমে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
শাহজালাল মসজিদ কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আশিক মিয়া সিজিলের সভাপতিত্বে ও মসজিদের ইমাম ও খতীব মাওলানা খায়রুল হুদা খানের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ম্যানচেস্টারের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আলহাজ¦ কবির আহমদ এমবিই, ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির গভর্ণর ড. হাবীবুল্লাহ ওবিই, দারুল কিরাতের প্রধানকারী মাওলানা ফখরুল হাসান রুতবাহ, হাফিজ জামাল হোসাইন, গ্রেটার ম্যানচেস্টার বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ ময়নুল আমীন বুলবুল, শাহজালাল মসজিদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ সুরাবুর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ আলা উদ্দীন আহমদ, সৌদী আরবের আল ইমাম ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আইমান আল গামদী, মাওলানা তাজ উদ্দীন, মাওলানা আবদুস সালাম, মাওলানা মাহবুবুল ইসলাম লিয়াকত, আলহাজ মালিক সওদাগর, শায়েখুল ইসলাম, রুহুল আমীন চৌধুরী মামুন, আলহাজ আবদুল হান্নান, এডভোকেট রুহুল আমীন প্রমুখ।
বক্তাগণ বলেন, আমাদের মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হচ্ছে সে, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।’ মহানবী (সা.) এর এই হাদীসের মর্মার্থকে কাজে লাগিয়ে কুরআন শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্টের অনুমোদনে শাহজালাল মসজিদ যে অগ্রণী ভুমিকা পালন করছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এ বছর শাহপরান মসজিদেও এ কোর্স আরম্ভ করায় সংশ্লিষ্ট মসজিদ কর্তৃপক্ষকে তারা ধন্যবাদ জানান। বক্তাগণ সহীহ করে কুরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য দুই মসজিদ কর্তৃপক্ষের এ মহতি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং সকলের সহযোগিতা ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলীর তত্ত্বাবধানে কমিউনিটির ছেলে-মেয়েরা বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা গ্রহণ করে ‘ক্বারী’ সনদ অর্জনে সক্ষম হচ্ছে এর জন্য তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, ছয় বছরের এই দারুল কিরাত কোর্স সম্পন্ন করে এ বছর শাহজালাল মসজিদ থেকে আট জন ছাত্র কিরাতের উপর সর্বোচ্চ ডিগ্রী ‘ক্বারী’ সনদ অর্জনে সক্ষম হয়। অনুষ্ঠান শেষে সফলকাম শিক্ষার্থীদের হাতে সার্টিফিকেট, মেডেল এবং ট্রফি তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। এতে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, দারুল কিরাতের শিক্ষকবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক মুসল্লী অংশ গ্রহণ করেন।
শাহজালাল মসজিদে এবং শাহপরান মসজিদে আয়োজিত এ কিরাত কোর্সে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে, যাদেরকে বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা প্রদান ও যথাযথ তত্বাবধানের জন্য নয় জন অভিজ্ঞ শিক্ষক তাঁদের শ্রম, মেধা ও সময় ব্যয় করেছেন। তাঁরা হলেন শাহজালাল মসজিদের ইমাম ও খতীব জনাব মাওলানা খায়রুল হুদা খান, প্রধান কারী জনাব মাওলানা ফখরুল হাসান (রুতবাহ), জনাব মাওলানা তাজ উদ্দিন, জনাব হাফিজ জামাল হোসাইন, কারী হাফিজুর রহমান, কারী মুহিব্বুল ইসলাম তালহা, কারী হাফিজ নাহিদ আহমদ এবং কারী আদনান আহমদ চৌধুরী। ক্বারী সাহেবদের প্রত্যেকেই কুরআন তিলাওয়াতের উপর সর্বোচ্চ সনদ ও ইজাযত লাভ করেছেন, যে সনদের সিলসিলার ধারাবাহিকতা হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.) এর মাধ্যমে অবিচ্ছিন্নভাবে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে।