Featuredজীবনীমনীষা

হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী : ক্ষণজন্মা এক মনীষী

মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী ফুলতলী

যুগে যুগে ক্ষণজন্মা মনীষীগণ এ উম্মতের মাঝে প্রস্ফুটিত হয়ে সমাজকে আলোকিত করে থাকেন। এ রকমই একজন ক্ষণজন্মা মনীষী হচ্ছেন হযরত আল্লামা মোঃ ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী। পিতৃ-মাতৃকুলে বেলায়াতের উত্তরাধিকার বহনকারী এ মহান মনীষী ১৯৪৭ সালে ভারতের আসাম প্রদেশের বদরপুর গ্রামে তাঁর নানা কুতবুল আকতাব আবূ ইউসুফ শাহ মোহাম্মদ ইয়াকুব বদরপুরী (র.) এর বরকতময় বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওলীয়ে কামিল, মুজাদ্দিদে যামান হযরত আল্লামা মোঃ আব্দুল লতিফ চৌধুরী ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী (র.)। তাঁর মাতা হচ্ছেন মহীয়সী রমণী খাদিজা খাতুন (রহ), যিনি কুতবুল আকতাব আবূ ইউসুফ শাহ মোহাম্মদ ইয়াকুব বদরপুরী (র.)-এর কন্যা। আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী হলেন হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) এর বড় ছাহেবজাদা। এ হিসেবে তিনি সকলের নিকট ‘বড় ছাহেব’ নামে পরিচিত।

শিক্ষাজীবনঃ

নিজ বাড়িতে বুযুর্গ পিতার নিকট ক্ষণজন্মা এ মনীষীর পড়া-শুনার হাতেখড়ি। অতঃপর ইছামতি আলিয়া মাদরাসা হতে দাখিল, সিলেট সরকারী আলিয়া মাদরাসা হতে আলিম এবং মাদরাসা-ই আলিয়া ঢাকা হতে ফাযিল ও কামিল অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৮ সালে কামিল (হাদীস) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তিনি কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। প্রাথমিক হতে কামিল শ্রেণি পর্যন্ত তিনি কৃতিত্বের সাথে শিক্ষা ধারার প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করেন। কামিল (হাদীস) উত্তীর্ণের পর তিনি মাদরাসা-ই আলিয়া ঢাকা থেকে ডিপ্লোমা ইন উর্দু ও আদিবে কামিল কোর্স সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ঢাকার বুরহান উদ্দীন কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রী সম্পন্ন করেন।

ঢাকা আলিয়া মাদরাসায় অধ্যয়নকালে তিনি মাদরাসার তৎকালীন হেড মাওলানা উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলিমে দীন হযরত মাওলানা মুফতী সায়্যিদ আমীমুল ইহসান মুজাদ্দিদী বারাকাতী (রহ) এর সংস্পর্শে আসেন। এই মহান উস্তাদের প্রভাব তাঁর জীবনে অত্যন্ত গভীর। তিনি তাঁর দারসে প্রায়ই তাঁর প্রিয় উস্তাযের স্মৃতি রোমন্থন করেন, তাঁকে নিয়ে নানা স্মৃতির উল্লেখ করেন। হানাফী ফিকহের এই মহীরূহও তাঁকে ভালোবাসতেন প্রাণ উজাড় করে। তাঁকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সময় দিতেন, তালিম-তারবিয়তের প্রতি খেয়াল রাখতেন। যে কোনো সময় হুজরায় প্রবেশের অবাধ অনুমতি ছিল তাঁর। মুফতী ছাহেব (র.) এর দারসে যে কয়েকজন ছাত্রের ‘মতন’ পড়ার অনুমতি ছিল তিনি ছিলেন তাদের একজন। কামিল পাশের পর হযরত মুফতী ছাহেব (র.) নিজে ডেকে নিয়ে তাঁকে হাদীসের কিতাব, ফিকহে হানাফীসহ তাঁর সকল জ্ঞানভান্ডারের ইজাযত প্রদান করেন। তিনি প্রিয় উস্তাদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেন “আমার মহতরম উস্তাদ মরহুম সৈয়দ আমীমুল ইহসান (র.) ঢাকা সরকারী আলিয়া মাদরাসায় আমাদিগকে বুখারী শরীফের দরস দেয়ার পর কিছুক্ষণ উর্দূ ভাষায় পবিত্র ছিরত বয়ান করতেন। সেই ইশক ও মহব্বতের বয়ান এখন তো আর কোথাও শুনিনা। আমার প্রাণ প্রিয় উস্তাদ এখন আর নাই, কিন্তু তাহার কণ্ঠস্বর, চেহারা, সজল নয়ন হৃদয় সংরক্ষণ যন্ত্রে অক্ষয় অমর হয়ে থাকবে।’ [রাহগীরে মদীনা]

ঢাকায় অবস্থানকালে অনেক সুধীজনের সাথে তাঁর উঠা-বসা ছিল। বাংলাদেশের মাননীয় প্রথম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এবিএম মাহমুদ হোসেনের সাথে তাঁর খুবই আন্তরিকতা ছিল। তিনি ছাত্রজীবনে তাঁর ঘরে দুই বছরকাল লজিং ছিলেন। ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী (র.)-এর নির্দেশনায় বিচারপতি মহোদয় ও আরো কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে তিনি দারসে হাদীস চালু করেছিলেন। অন্যদিকে বিচারপতি মহোদয় তাঁকে তাঁর সন্তান সৈয়দ দস্তগীর হোসেন এর উর্দূ-ফার্সী শিক্ষক মনোনীত করেছিলেন। এ তথ্য হাইকোর্টের বর্তমান বিচারপতি জনাব সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেনের বাচনিক জানা যায়।

পারিবারিক জীবন
পারিবারিক জীবনে তিনি মৌলভীবাজার জেলাধীন রাজনগরস্থ কামারচাক গ্রামের প্রখ্যাত ও সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের মান্যবর ব্যক্তিত্ব জনাব দেওয়ান আব্দুস সবুর সাহেবের দ্বিতীয় কন্যা দেওয়ান ছরওত হাবীবুন্নেছার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিন মেয়ে ও চার ছেলে মোট সাত সন্তানের জনক তিনি।

বহুমুখী কর্মময় জীবন
আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী কর্মময় জীবনে অনেক দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন এবং এখনও দিচ্ছেন। সৎপুর দারুল হাদীস কামিল মাদরাসা ও ইছামতি দারুল উলূম কামিল মাদরাসায় তিনি মুহাদ্দিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সৎপুর দারুল হাদীস কামিল মাদরাসায় প্রিন্সিপাল হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ফুলতলী মাদরাসার কামিল জামাতের ছাত্রদের অবৈতনিকভাবে হাদীসে নববীর দারস প্রদান করে থাকেন। এছাড়াও প্রায় প্রতি মাসে নিজস্ব উদ্যোগে দারসে হাদীসের আয়োজন করে থাকেন। এতে দেশ-বিদেশের নানা স্থান হতে আলিম-উলামা ও হাদীসের শিক্ষার্থীগণ অংশ গ্রহণ করে থাকেন।

হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর সকল খিদমতে তাঁর রয়েছে সরাসরি অংশগ্রহণ। মহান পিতার শুরু করা যে কোনো শুভ কাজকে এগিয়ে নিতে তিনি অন্তঃপ্রাণ। হযরত ছাহেব কিবলাহ ইলমে কিরাতের খিদমত শুরু করেছেন, তাঁর সুযোগ্য সন্তান হিসেবে একে প্রাতিষ্ঠানিকরূপ দান করেন তিনি। দারুল কিরাতের স্তর বিন্যাস, কারী ছাহেব নিয়োগ, কেন্দ্র অনুমোদন, পরিদর্শন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ, প্রতিটি কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও এর যথাযথ বাস্তবায়ন সবকিছু নিশ্চিত হয় তাঁরই হাতে। বলা যায়, বড় ছাহেব কিবলাহর কর্মজীবনের বহুলাংশই এ দীনী প্রতিষ্ঠান তিলে তিলে গড়ে তুলতে ব্যয় হয়েছে। তাঁর ইখলাস, কর্মস্পৃহা, দক্ষতা, চিন্তাশীলতা, নীতিনিষ্টতা ও অবিরত সময়দান এ প্রতিষ্ঠানটিকে আজকের জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

ছাহেব কিবলাহ কারাগারে বসে মুনতাখাবুস সিয়র, নালায়ে কলন্দর ইত্যাদি রচনা করেছেন তা স্ক্রিপ্টের সাথে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে মিলিয়ে কাতিবের মাধ্যমে ছাপার কাজকে ত্বরান্বিত করেছেন তিনি। অসহায় দুঃস্থ মানুষের সেবা ছিল হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহর জীবনের স্বপ্ন। তাঁর এ স্বপ্নকে বাস্তবায়নে তিনি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ফুলতলী গরীব সাহায্য প্রকল্প’, ‘লতিফী হ্যান্ডস বাংলাদেশ’, ‘লতিফী হ্যান্ডস ইউকে’ -এর মত চ্যারিটি সংস্থা।

ইয়াতীমের প্রতি ছিল হযরত ছাহেব কিবলাহর দুর্নিবার টান। তাদের প্রতিপালনের জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ইয়াতীমখানা। শুরু থেকে এর তত্ত্বাবধান করেন হযরত আল্লামা মোঃ ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী। তাঁর পরিচালনা ও শ্রমে আজকে তা দুই হাজারের অধিক ইয়াতীমের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। লতিফিয়া এতীমখানায় ইয়াতীমদের ফ্রি থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি বালিকা শাখা, নানাবিধ সহপাঠ্যক্রম, প্রকাশনা, তারবিয়াত এর ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, কম্পিউটার ল্যাব, সেলাই প্রশিক্ষণ, মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ ইত্যাদির ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে পরিবহন ব্যবস্থা, চিকিৎসা সেবা ও খেলা-ধূলার সুযোগ।

তরীকতের তালিমের জন্য মানুষের আনাগুনা ছিল হযরত ছাহেব কিবলাহর কাছে। দাওয়াতী সফরের ব্যস্ততা, ওয়ায মাহফিল ইত্যাদির ফাঁকে ইলমে তাসাউফের প্রতি আগ্রহীগণ যাতে নির্বিঘ্নে ছাহেব কিবলাহর সুহবত পান এজন্য তিনি ছাহেব কিবলাহর অনুমতি নিয়ে ‘মাসিক খানেকা’ চালু করেন। প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবারে তিনদিনের এ আয়োজন ছিল তরীকতের পথিকদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ। কারণ তারা এ সময় তাসাওউফের তালিম-তারবিয়াত, সবক, চিল্লাকাশী (নির্জনবাস) ইত্যাদির নির্দেশনা নিতেন মহান মুরশিদের নিকট হতে। ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর এ সকল খিদমতকে সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিতে তিনি অগ্রপথিকের ভূমিকা রাখছেন।

খিদমতে খালক

আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলীর জীবনের উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে তিনি জীবনের ঊষালগ্ন হতে মানব সেবার জন্য অন্তপ্রাণ। অসহায় বনী আদমের কান্না ঘুচাতে, অশ্রু মুছতে তিনি সদাই উদগ্রীব। তিনি মানব সেবাসূলক প্রতিটি কর্মসূচীই শুরু করেন হৃদয়ের তাকীদে নিজের উদ্যোগে অল্প পরিসরে নিজস্ব বাজেটে। পরবর্তীতে সেটিই সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতায় একেকটি বড় বড় প্রজেক্টে পরিণত হয়। তাঁর মাধ্যমে পরিচালিত এ সকল প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- প্রতি শনিবার ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে বিধবা ও মিসকিনদের মধ্যে শিরণী/খোরাকী বিতরণ, গৃহ নির্মাণ প্রকল্প, গরীব অন্ধ সাহায্য প্রকল্প, গরীব আতুর সাহায্য প্রকল্প, গরীব বিধবা সাহায্য প্রকল্প, সদ্য বিধবা সাহায্য প্রকল্প, এতীম বৃত্তি, খতনা প্রকল্প, বিবাহ সাহায্য প্রকল্প, হালাল রোজগারের উপকরণ যেমন- কুড়াল, দা, কাচি, কুদাল, জাল, ড্রিল মেশিন ইত্যাদি প্রদান প্রকল্প, সেলাই মেশিন সাহায্য প্রকল্প, হালাল রোজগারে পশু পালন (গরু ও ছাগল), বহুমুখী শিক্ষা প্রকল্প (কম্পিউটার, সেলাই, ড্রাইভিং ইত্যাদি প্রশিক্ষণ), চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প (ছানি অপারেশন), স্যানিটেশন প্রকল্প, কুরবানী প্রকল্প, রিক্সা বিতরণ প্রকল্প, আতুরদের (পঙ্গুদের) মধ্যে হুইল চেয়ার ও বগলী বিতরণ, ঠেলাগাড়ী বিতরণ প্রকল্প, ভ্যানগাড়ী বিতরণ প্রকল্প, রামাদ্বান শরীফে বিধবা ও মিসকিনদের মধ্যে ইফতার বিতরণ (প্রতিদিন), এতীম, মিসকীন ও বিধবাদের মধ্যে কুরআন শরীফ বিতরণ, বৃদ্ধকে কাপড় দান (পাঞ্জাবী, লুঙ্গি, টুপি, গেঞ্জি, মশারী, লেপ ও তোষক ইত্যাদি), গরীবদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ (কম্বল, সোয়াটার, চাদর, মাফলার ইত্যাদি), গরীবদের মধ্যে বীজ, ধানের চারা ইত্যাদি বিতরণ, গরীবদের মধ্যে চৌকি বিতরণ, বৃক্ষ রোপন প্রকল্প, দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণ প্রকল্প, মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প, ব্যবসার পুঁজি সহ দোকান প্রদান প্রকল্প, রামাদ্বান শরীফে তালাবাদের মধ্যে লুঙ্গি বিতরণ প্রকল্প, গরীবদের মধ্যে নৌকা বিতরণ, টিউবওয়েল ও পুকুর খনন, এতীম ছাত্রদেরকে কাপড়, তৈল, সাবান, টুপি, লুঙ্গি, লেপ ও তোষক ইত্যাদি প্রদান, গরীবদের মধ্যে কলস, জায়নামায, লাঠি, চিলিমচি, বদনা ইত্যাদি বিতরণ, গরীব মহিলাদের মধ্যে ছাতা, শাড়ী, নামাযের উড়না ও বোরকা ইত্যাদি বিতরণ, এতীম ছাত্রদেরকে স্কুল ড্রেস দান, লতিফিয়া এতীমখানায় এতীম ছাত্রদের চৌকি প্রদান প্রকল্প, এতীম ছাত্রদেরকে নগদ টাকা প্রদান প্রকল্প, রামাদ্বান শরীফে মিসকিন ছাত্র/ছাত্রীদেরকে কাপড় (পাঞ্জাবী, পাজামা, টুপি, লুঙ্গি, থ্রী-পিছ ও ফ্রক ইত্যাদি) প্রদান, অগ্নিকান্ডে দুর্দশাগ্রস্থ পরিবারকে ডেগ, ডেগচী, কলস, পরিবারের সদস্যদের কাপড় নগদ সাহায্য প্রদান ইত্যাদি। তিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। সব অসহায়দের তিনি ভালোবাসেন।

ভ্রমণ ও যিয়ারত
তিনি পৃথিবীর নানা দেশ ভ্রমণ করেছেন। ১৯৬৫ সালে তিনি প্রথম হজ্জ করেন। তখন তিনি আলিম জামাতে পড়তেন। সে সময়ে হজ্জে গমন বর্তমানের মত এতটা সহজসাধ্য ছিল না। তাই তাঁর সমবয়সী ও সহপাঠীদের মাঝে বিষয়টি বেশ আলোড়ন তুলেছিল। ঢাকা আলিয়ার সহপাঠীদের অনেকেই তাঁকে ‘হাজী সাব’ নামে ডাকতেন। তৎকালীন সময়ের ঢাকা আলিয়া মাদরাসার ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট অভিধানবেত্তা প্রফেসর ড. ফজলুর রহমান থেকে এ তথ্য জানা যায়। বলাবাহুল্য তরুণ বয়সে তাঁর হজ্জের এ সফর হয়েছিল তাঁর ওয়ালিদ মুহতারাম হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহর সাথেই। তিনি গ্রেট বৃটেন, আমেরিকা, সুইডেন, তুরস্ক, পাকিস্তান ও ভারত সফর করেছেন। এ সকল সফর মূলতঃ দাওয়াতী সফর। বিশেষতঃ ভারতে তিনি বেশ কয়েকবার ভ্রমণ করেছেন যিয়ারতের উদ্দেশ্যে।

রচনাবলী
শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও তাঁর কলম থেমে থাকেনি। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, অনুবাদ, সংকলন ইত্যাদি নানাবিধ রচনায় ব্যপৃত আছেন তিনি। তাঁর রচিত গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছে- চল মুসাফির পাক মদিনায় সবুজ মিনার ঐ দেখা যায়, বালাই হাওরের কান্না, আদর্শ গল্প সংকলন, যাকাত প্রসঙ্গে, চল্লিশ হাদীস, রাহগীরে মদীনা মুনাওয়ারা, কদুর উপকারিতা ও মধুর উপকারিতা, প্রাথমিক তাজবীদ শিক্ষা, সাধারণ কবিতা, জীবনীগ্রন্থ- হযরত আলী বিন হোসাইন যয়নুল আবিদীন (রা.), ইমাম বুখারী (র.), সাইয়িদ আহমদ শহীদ বেরেলবী (র.)-এর জীবনী, হযরত মাওলানা হাফিজ আহমদ জৌনপুরী (র.)। আর অনূদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে মুনতাখাবুস সিয়র, দ্বিয়াউন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আনওয়ারুছ ছালিকিন ও আল-কাউলুছ ছাদীদ।

শেষ কথা
হযরত আল্লামা মোঃ ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী এক ক্ষণজন্মা মনীষী। সমাজের অসহায় মানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি ইলমে কিরাতের খিদমত, ইলমে তাসাউফের দীক্ষা, ইলমে হাদীসের দারস এবং লেখা-লেখিতেও তিনি সময় দিচ্ছেন। প্রতিদিন বাদ-যুহর থেকে আসর পর্যন্ত মানুষজনকে সাক্ষাৎ দেন তিনি। তাদেরকে নিয়ে সূরা ইয়াসীনের খতম, খতমে খাজেগান, যিকর, মীলাদ-কিয়াম এবং দুআ করেন। তাদের মনোবেদনা, অভাব-অভিযোগ শুনে তাদেরকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।

বুযুর্গ পিতা-মাতার সুহবত ও মকবূল উস্তাযদের সংস্পর্শ তাঁকে আল্লাহ-রাসূল-প্রেমে সিক্ত করেছে; জীবনের পথ-পরিক্রমা নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। অসহায় মানুষের দুঃখ-বেদনা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা -এটা তাঁর প্রতি মহান রবের বিশেষ দান। সমাজের গরীব-দুঃখী, অন্ধ-আতুর, ইয়াতীম-মিসকীনের অশ্রু মোছাতে তাঁর নানাবিধ কর্মতৎপরতা আমাদের সমাজের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ স্থাপন করেছে। দুঃখী মানুষের ব্যাথাতুর হৃদয়ের দুঃখ ঘুচাতে ছুটে চলেছেন অবিরত। তাঁর এ ক্লান্তিহীন পথচলা অব্যাহত থাকুক দীর্ঘকাল। আমরা তাঁর কর্ম মুখর জীবনের দীর্ঘায়ূ কামনা করছি রাহমান-রাহীমের দরবারে।

লেখকঃ সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; খতীব, সুপ্রিমকোর্ট মাযার মসজিদ, ঢাকা।

Related Articles