আ’মলসংবাদ

আরাফাতের রোযা : মর্যাদা, মহত্ত্ব ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাওলানা মাহমুদুল হাসান

হাদীস শরীফে আরাফাহ’র রোযার অনেক ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। মুসলিম শরীফে এসেছে-

عَنْ أَبِي قَتَادَةَ رَضِيَ الله عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ
-হযরত আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, ‘আরাফার দিনের রোযার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, এ রোযা তার পূর্বের ও পরের বছরের গোনাহ’র কাফফারা হবে।’
{সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৭৪০}

অন্য বর্ণনায় এসেছে
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم سئل عن صوم يوم عرفة فقال : ( يكفر السنة الماضية والباقية ) رواه مسلم
-রাসূল (সা.) কে আরাফার রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন (আরাফার রোযা) পূর্বাপর বছরের গুনাহ’র কাফফারা হবে।

রাসুল (সা) যিলহজ্জের প্রথম দশকে রোযা রাখতেন। আইম্মায়ে কিরামও এ সময় রোযা রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। অর্থাৎ তারা এ দশকে ১ থেকে ৯ যিলহজ্জ রোযা রাখতেন। যারা ১ থেকে ৯ যিলহজ্জ রোযা রাখতে পারেন না তারা আরাফার দিন রোযা রাখার চেষ্টা করেন।

প্রথমেই আমাদের জানা উচিত, হাদীসে উল্লেখিত “ইয়াউমে আরাফাহ” বলতে ঈদের আগের দিন তথা ৯ই যিলহজ্জকে বুঝায়। ৯ যিলহজ্জ হাজীগণ আরাফায় অবস্থান করেন, এ জন্যে ৯ যিলহজ্জকে আরাফার দিন বলা হয়।
এ রোযা আরাফা বা উকুফে আরাফার আমল নয়; তা ঐ তারিখের আমল। ‘ইয়াউমে আরাফা’ হচ্ছে ঐ তারিখের (৯ যিলহজ্বের) পারিভাষিক নাম। আর তাই যে দেশে যে দিন ৯ যিলহজ্জ হবে সে দিনই আরাফার দিন হিসাবে গণ্য করা হবে।

যারা “ইয়াউমে আরাফা” দ্বারা “উকূফে আরাফা” তথা সৌদি আরবের ৯ ই যিলহজ্জ উদ্দেশ্য নিচ্ছেন তারা তাকবীরে তাশরীকের ক্ষেত্রে কি বলবেন? কেননা হাদীস শরীফে তাকবীরে তাশরীক শুরু হওয়ার দিনকেও “ইয়াউমে আরাফা বলা হয়েছে।
عن علي رضي الله عنه : أنه كان يكبر بعد صلاة الفجر يوم عرفة، إلى صلاة العصر من آخر أيام التشريق، ويكبر بعد العصر.
رواه ابن أبي شيبة في مصنفه وإسناده صحيح كما في الدراية.

এখন যদি আমরা আরাফার দিন বলতে যদি সৌদি আরবের ৯ যিলহজ্জ অর্থ নেই তাহলে তাকবীরে তাশরীকও এই দিন শুরু করতে হয়, অথচ সৌদি আরবে যে দিন ৯ যিলহজ্জ আমাদের দেশে সে দিন ৮ যিলহজ্জ। আর ৮ যিলহজ্জ তাকবীরে তাশরীক শুরু করার কোন বিধান নেই।

এখান থেকেও প্রমাণিত হয়, ইয়াউমে আরাফা ৯ যিলহজ্জের পারিভাষিক নাম। তাই যেদিন যে এলাকায় ৯ যিলহজ্জ হবে সেদিনই ঐ এলাকার লোকজনের জন্য আরাফার দিন। রোযা রাখতে চাইলে ঐ দিনই রাখবেন।

৯ যিলহজ্জ ছাড়াও হাদীস শরীফে বিভিন্ন তারিখের পারিভাষিক নাম ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, ১০ যিলহজ্জকে হাদীস শরীফে “ইয়াউমুন নাহার” বা কুরবানীর দিন বলা হয়েছে। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে-
أن النبي صلى الله عليه وسلم قال:( أعظم الأيام عند الله يوم النحر… )
-নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন: আল্লাহর কাছে সব চেয়ে মর্যাদাবান দিন হলো কুরবানীর দিন।
আমরা জানি হাজী ছাহেবগণ যেদিন কুরবানী করেন সে দিনকেও ইয়াউমুন নাহার বলা হয়। কিন্তু এটা তার মূল অর্থ নয়। কেননা কেবল হাজীদের কুরবানীর দিনকেই যদি নাহারের দিন বলা হয় তাহলে ঐ দিন কুরবানী করা পৃথিবীর সকল মুসলমানের জন্য অাবশ্যক হয়ে যাবে। অথচ হাজীগণ যে দিন কুরবানী করছেন সে দিন আমাদের দেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৯ যিলহজ্জ তথা কুরবানীর আগের দিন। আর ৯ যিলহজ্জ কুরবানীর দিন মনে করা নিঃসন্দেহে ভুল। আর এটা থেকেই বুঝা যায় ইয়াউমুন নাহার হলো কুরবানীর দিনের পারিভাষিক নাম। অনুরূপভাবে ইয়াউমু আরাফাহ হলো যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখের পারিভাষিক নাম। আর অারাফার রোযা বলতে যিলহজ্জের ৯ তারিখ রোযা রাখাকেই বুঝায়। সুতরাং যে এলাকায় যেদিন ৯ যিলহজ্জ হবে সে দিনই সে এলাকায় ইয়াউমু আরাফাহ বা আরাফার দিন হিসাবে ধর্তব্য হবে।

Related Articles