
আশুরার দিনে রোযা রাখা, সদকাহ করার পাশাপাশি পরিবার-পরিজনের জন্য উত্তম খাবারের ব্যবস্থা করার কথাও হাদীস শরীফে পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
مَنْ وَسَّعَ عَلَى عيَالِهِ يَوْمَ عَاشُورَاءَ أَوْسَعَ اللَّهُ عَلَيْهِ
-যে ব্যক্তি আশুরার দিন তার পরিবারের উপর সচ্ছলতা দেখাবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য উক্ত বছরকে সচ্ছল করে দিবেন। [আল-মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-১০০০৭, শুআবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৫১৩]
হাদীসটি একাধিক সাহাবী থেকে অনেক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রা., হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রা., হযরত জাবির রা., হযরত আবূ হুরায়রাহ রা., হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু উমর রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
বিভিন্ন সনদে হাদীসটি ইমাম তাবারানী, বায়হাকী, ইসহাক ইবনু রাহায়াইহ, হাকীম তিরমিযী, ইবনু হাজার আসকালানী, ইমাম হায়ছামী সহ মুহাদ্দিসীনে কিরামের অনেকেই বর্ণনা করেছেন। অনেক সনদে হাদীসটি বর্ণিত হলেও এককভাবে কোন সনদ-ই সহীহ হওয়ার শর্ত পূরণ করতে পারে নি। তাই মুহাদ্দিসীনে কিরাম হাদীসটির অধিকাংশ সনদকে দ্বঈফ বলেছেন। কিন্তু একাধিক দ্বঈফ সনদে হাদীসটি বর্ণিত হওয়ায় মুহাদ্দিসগণের অনেকেই হাদীসকে শক্তিশালী বা গ্রহণযোগ্য হিসাবে মেনে নিয়েছেন। ইমাম বায়হাকী র. হাদীসটির সকল সনদ উল্লেখ করার পর বলেন,
هَذِهِ الْأَسَانِيدُ وَإِنْ كَانَتْ ضَعِيفَةً فَهِيَ إِذَا ضُمَّ بَعْضُهَا إِلَى بَعْضٍ أَخَذَتْ قُوَّةً،
-এই সনদগুলো যদিও দ্বঈফ কিন্তু এসব যখন একটি অন্যটির সাথে মিলেছে তখন তা শক্তিশালী হয়ে গেছে। [শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩৫১৫, খন্ড-৫, পৃষ্ঠা ৩৩৩]
অনুরূপ হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী র. বলেন-
أسانيده كلها ضعيفة ، ولكن إذا انضم بعضها إلى بعض أفاد قوة،
-হাদীসটির সনদসমূহের প্রত্যেকটিই দূর্বল। কিন্তু এগুলো যখন পরস্পর যুক্ত হয়েছে তখন শক্তিশালী হয়েছে। [আল-আমালী (২৭-৩০), মুখতাসার তারগীব-তারহীব (৮২)]
ইমাম সুয়ূতী তার “আদ-দুরার” এর মধ্যে এবং যাইনুদ্দীন ইরাকী তার “ফাতাওয়া” তে-ও হাদীসটিকে গ্রহণযোগ্য বলেছেন।
মোটকথা, একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ায় মুহাদ্দিসীনে কিরামের অনেকেই হাদীসটিকে গ্রহণযোগ্য হিসাবে মেনে নিয়েছেন। তাই এ হাদীস অনুযায়ী আমল করতে কোন অসুবিধা নেই।
হাদীসের প্রসিদ্ধ ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ র. বলেন, جربنا ذالك فوجدناه حقا
আমরা (হাদীসের উপর আমল করে) বিষয়টি যাচাই করেছি এবং এর বাস্তবতা পেয়েছি। [আল ইসতিযকার, ১০/১৪০]
অনুরূপ ইমাম সুফয়ান ইবনু উয়াইনা র. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন- আমরা ৫০/৬০ বছর থেকে এ হাদীসের উপর আমল করে আসছি, এতে শুধু কল্যাণ-ই পেয়েছি। [ফয়যুল কাদীর; মানাবী]
মাযহাব চতুষ্টয়ের অনেক কিতাবাদিতেও আশুরার দিন সাধ্যমতো ভালো খাবারের আয়োজন করাকে উত্তম বলা হয়েছে। শাফেঈ মাযহাবের প্রসিদ্ধ আলেম সুলাইমান ইবনু মানসূর বলেন-
ويستحب فيه التوسعة على العيال والأقارب، والتصدق على الفقراء والمساكين من غير تكلف
-আশুরার দিন সামর্থ্য অনুযায়ী নিজের পরিবার ও নিকটাত্মীয়দের জন্য উত্তম খাবার ব্যবস্থা করা এবং গরীব-মিসকীনদের দান-সদকাহ করা মুসতাহাব। [হাশিয়াতুল জামাল আলা শারহিল মিনহাজ, ৩/৪৬৫]
বুতী হাম্বলী র. বলেন-
وينبغي التوسعة فيه على العيال.
আশুরার দিন পরিবার-পরিজনের জন্য উত্তম খাবারের ব্যবস্থা করা উচিত। [কাশফুল কিনা’ আন মাতানিল ইকনা’, ২/৩৩৯]
আমাদের সমাজে অনেকেই আশুরার দিনে পরিবারের জন্য উত্তম খাবার ব্যবস্থা করার প্রথাকে ভিত্তিহীন, বিদআত বলে থাকেন। আসলে, ইমাম বায়হাকী, আসকালানী, সুয়ূতীর মতো মুহাদ্দিসগণ যে আমলকে হাদীস মুতাবিক স্বীকৃত বলেছেন সে আমলকে এত সহজে ভিত্তিহীন বা বিদআত বলা উচিত নয়।
আমাদের উচিত হলো আশুরার দিনের অন্যান্য আমলের পাশাপাশি সামর্থ্য অনুযায়ী এই ছোট আমলটিও করার। এতে আমরা আমাদের এক বছরের রিযেকের মধ্যে আল্লাহ তাআলার বরকত লাভ করতে পারব, ইনশাআল্লাহ।