আ’মলআক্বীদা

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্যাদার আলােচনা লুকিয়ে রাখা উচিৎ নয়

আল্লামা মুফতি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী

পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস আসলেই সালাফি লা-মাযহাবী ও কিছু সংখ্যক দেওবন্দ সমর্থক আলিমের একটি দ্বীনি খিদমত হলাে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষে আয়ােজিত অনুষ্ঠান সমূহের বিরােধীতা করা। তারা তাদের সমর্থকদেরকে বুঝাতে চান চল্লিশ বছর বয়সের পূর্বে রাসূল (সা.) তাদের মতােই একজন মানুষ ছিলেন! (নাউযুবিল্লাহ) অথচ দেওবন্দীরা যাকে যুগের ইমাম বলে থাকেন (আনওয়ার শাহ কাশ্মীরি র.) তিনি তিরমীযী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ আরফুশ শাজী কিতাবে লিখেছেন, ঐ সময় (যখন আদম আলাইহি ওয়াসাল্লাম রূহ ও দেহের মধ্যে ছিলেন) থেকেই রাসূল (সা.) নবী ছিলেন এবং তাঁর প্রতি নবুওয়াতের আহকাম সমূহ জারী ছিল। অন্যান্য নবীগণের ক্ষেত্রে ছিল তার বিপরীতঃ কারণ তাঁদের নবুওয়াতের হুকুমসমূহ তাঁদের নবুওয়াত লাভের পর থেকে কার্যকর হয়। (আরফুশ শাজী)
বিস্তারিত জানতে হলে- শাহ ছাহেবের মাশকিলাতুল কুরআন কিতাবটি দেখে নিতে পারেন। শাহ ছাহেবের নাতী শাগরিদ এবং শিব্বির আহমদ উসমানি সাহেবের ছাত্র শায়খুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হক সাহেব তার উস্তাদের তত্ত্বাবধানে বুখারী শরীফের একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ লিখেছেন। কিতাবটির ৫ম খণ্ডে সৃষ্টির প্রথম থেকে রাসূল (সা.)-এর মর্যাদার যে আলোচনা করেছেন মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌছিয়ে দেয়া ঈমানী দায়িত্ব। আজিজুল হক সাহেবের কিতাব থেকে এ প্রসঙ্গে কয়েকটি পরিচ্ছেদের তালিকা নিয়ে পেশ করা হলো- ১) সর্বপ্রথম সৃষ্টি হযরত মুহাম্মদ (সা.) ২) নিখিল সৃষ্টি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিকাশ সাধন ৩) বিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে উর্ধ্ব জগতে হযরতের নবুওয়াতপ্রাপ্তি ৪) আরশ কুরসীতে মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম এবং তাঁহার নবুওয়াতের প্রচার ৫) পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবীর প্রতি মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে নির্দেশ ৬) পূর্বাপর সকল মানুষ, জ্বীন ও ফেরেশতাগণের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ৭) পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহে হযরতের বয়ান ৮) হযরতের আবির্ভাব ৯) সর্বোত্তম যুগে হযরতের আবির্ভাব ১০) হযরতের জন্য সর্বোত্তম বংশ নির্বাচন ১১) হযরতের পবিত্র নসব বা বংশ পরিচয় ১২) হযরতের রক্তধারায় আবদিয়ত ১৩) সত্যের প্রাধান্য দ্বারা হযরতের আবির্ভাবকে অভ্যর্থনা ১৪) বেলাদত বা শুভ জন্ম ১৫) হযরতের শুভ জন্মোপলক্ষে আলৌকিক ঘটনাবলী ১৬) হযরতের আবির্ভাবে বিশ্বজোড়া প্রতিক্রিয়া (শায়খুল হাদীস আজিজুল হক সাহেব কৃত বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ৫ম খণ্ডের ২পৃষ্ঠা থেকে ৩৯ পৃষ্ঠা)
শায়খ মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (র.)-এর নশরুত তীব কিতাবে আরাে কয়েকটি পরিচ্ছেদের আলােচনা করতে পারেন-
১) নূরে মুহাম্মদীর বয়ান ২) নবী (সা.)-এর যে সকল ফজিলত পূর্ববর্তীদের কাছে প্রকাশিত হয়েছে ৩) পবিত্র নসব বা বংশ পরিচয় ৪) মাতৃগর্ভে থাকাবস্থায় বরকতময় ঘটনাসমূহ ৫) জন্মের সময়ের অলৌকিক ঘটনাসমূহ ৬) শৈশব কালীন ঘটনাসমূহ ৭) যৌবনে পদার্পন করার পরের ঘটনাসমূহ
উল্লেখ্য; উপরােল্লেখিত মর্যাদাপূর্ণ বিষয়গুলােকে লুকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা কি প্রকৃত মুমিনের কাজ?
হিংসা-বিদ্বেষ বর্জন করে নির্ভরযােগ্য কিতাব পড়ুন নবী করীম (সা.)-এর উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে অবগত হওয়ার চেষ্টা করুন ১। শানে রিসালত বিরােধীরা কুরআন, হাদীস, তাফসীর, সীরাতগ্রন্থ থেকে মীলাদুন্নবীর স্বপক্ষে কোন দলিল পেশ করলে- বিভিন্ন যুক্তির মাধ্যমে তা অস্বীকার করতে চায়। বিশেষ করে যে সকল নির্ভরযােগ্য সীরাশ্রহে মীলাদুন্নবীর আলােচনা করা হয়েছে, তন্মধ্যে একটি কিতাব হলো মাওয়াহিবে লেদুনিয়া। যাহা লিখেছেন বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ইরশাদুসসারী এর লিখক শাহাবুদ্দীন আহমদ ইবনে মুহাম্মদ কসতলানী (মৃত্যু-৯২৩ হিজরী)। কিতাবটি সম্পর্কে সিরাজুল হিন্দ শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দীসে দেহলভী (র.) লিখেছেন, মাওয়াহিবে লেদুনিয়া কিতাবটি ইমাম কসতলানীর লিখিত যা এ বিষয়ে (সীরাত) অদ্বিতীয়। (বুসতানুল মুহাদ্দিসীন, পৃষ্ঠা-২০৩)।
২। শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দীসে দেহলভী (র.)-এর উজালাতুন নাফেয়ার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাওয়ায়িদে জামেয়া কিতাবে আব্দুল হাই লকনবী (র.)-এর পিতা আব্দুল হেলিম লক্বনবী (র.) লিখেছেন, হাজী খলিফা বলেন, এ কিতাবটি অত্যন্ত উচ্চাঙ্গের এবং অদ্বিতীয়। (ফাওয়ায়িদে জামেয়া, পৃষ্ঠা-২০৩)
৩। আনােয়ার শাহ কাশ্মীরি (র.)-এর বিশিষ্ট ছাত্র আল্লামা সৈয়দ আহমদ রেজা বিজনুরী (র.) তার লিখিত বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ আনওয়ারুল বারী কিতাবে লিখেছেন, আল্লামা মুহাদ্দীস কসতলানীর লিখিত মাওয়াহিবে লেদুনিয়া কিতাবটি রাসূলে পাক (সা.)-এর সীরাত গ্রন্থগুলাের মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযােগ্য ও বিস্তারিত। যার ব্যাখ্যা লিখেছেন আল্লামা মুহাদ্দীস যুরকানী মালিকি। (আনওয়ারুল বারী ১১ খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩) দেওবন্দী প্রখ্যাত আলিম ইদ্রিস কান্দলভী সাহেব তার সীরাতুল মুস্তফা কিতাবে অধিকাংশ জঠিল বিষয়গুলির সমাধান দিয়েছেন মাওয়াহিবে লেদুনিয়া ও তাঁর ব্যাখ্যাগ্রন্থ থেকে।
উল্লেখ্য অধিকাংশ দেওবন্দী আলিমগণ রবিউল আউয়াল মাসে মীলাদুন্নবীর মাহফিল করার ব্যপারে অনেক অশালিন কথাবার্তা বলে থাকেন। মাওয়াহিবে লেদুনিয়া ও তার ব্যাখ্যাগ্রন্থ জুরকানী যে কিতাবগুলােকে অত্যন্ত নির্ভরযােগ্য বিশ্বাস করে শাহ কাশ্মীরি থানভী সাহেব, ইদ্রিস কান্দালভী ও বিজনুরী প্রমূখ আকাবিরিনে দেওবন্দী আলিমগণ নিজ নিজ কিতাবে বিভিন্ন বিষয়ে উদ্ধৃতি পেশ করেছেন। উক্ত কিতাবে মীলাদুন্নবী মাহফিলের গুরুত্ব ও ফযিলত সম্পর্কে ইমাম শামছুদ্দীন ইবনে জাযারী (র.) [৭৫১-৮৩৩]-এর বক্তব্য তুলে ধরা হলাে।
“মুসলমানগণ সর্বদা রবিউল আউয়াল মাসে মাহফিলে মীলাদুন্নবী করে আসছেন। (এ মাসে) তারা সুস্বাদু খাবার ইত্যাদি পাকাতেন, দান খয়রাত করতেন, আনন্দ প্রকাশ করতেন, অধিক নেক আমল করতেন, নবী করীম (সা.)-এর জন্ম বৃত্তান্ত পাঠ করতেন। এ সকল নেক আমলের অসীলায় তাদের উপর অফুরন্ত, অনুগ্রহ বর্ষিত হতাে। মাহফিলে মীলাদুন্নবী করার অভিজ্ঞতালব্দ বিশেষ ফায়দা হলাে- উক্ত বছর আল্লাহর হেফাযতে থাকা এবং হাজত পূরণ ও উদ্দেশ্য সাধন হওয়ার দ্রুত সুসংবাদ লাভ করা। আল্লাহ সে ব্যক্তির উপর রহমত নাযিল করুন যে মীলাদুন্নবীর মাসের রাতসমূহকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করে। যাতে যার অন্তরে শত্রুতার রােগ রয়েছে সে যেন তার শত্রুতায় আরাে কঠোর হয়”। (মাওয়াহিবে লেদুনিয়্যা ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৩৯)।
বর্তমান দেওবন্দী উলামায়ে কেরামের শায়খুল ইসলাম তাকি উসমানী সাহেব তার লিখিত উলুমুল কুরআন কিতাবে ইবনে জাযারী (র.) সম্পর্কে লিখেছেন, কিরাআত বিষয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ ঈমাম নামে প্রসিদ্ধ, হাদীস ও ফিকাহ শাস্ত্রে হাফেয ইবনে কাসীরের শাগরিদ এবং হাফিয ইবনে হাজর এর উসতায হাফিয আবুল খায়ের মুহাম্মদ ইবনে জাযারী (মৃত্যু-৮৩৩ হিজরী)। (উলুমুল কুরআন পৃষ্ঠা-১০৭)

Related Articles