
সমস্ত উলামায়ে কেরাম একমত যে কালেমার দু’টি রুকন বা মূল রয়েছে। একটাকে নফি আরেকটা ইসবাত বলে। লা ইলাহা হলো নফি, আর ইল্লাল্লাহ হলো ইসবাত। নফি এর অর্থ হলো আল্লাহ তায়ালা ছাড়া সব বস্তু থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া। আর ইসবাতের অর্থ হলো, একমাত্র আল্লাহ তায়াকে ইবাদতের উপযুক্ত বিশ্বাস করা। লা ইলাহা বলার দ্বারা সব মিথ্যা প্রভূদেরকে অস্বীকার করা হয়। একে নফি বলে। আর ইল্লাল্লাহ বলার দ্বারা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে ইবাদতের উপযুক্ত বিশ্বাস করা হয়।
উলামায়ে সর্বসম্মত বক্তব্য হলো কালেমার ইল্লাল্লাহ দ্বারা ইসবাত সাব্যস্ত হয়। অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে প্রভূ হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। আর একারণেই তাসাউফের বুযুর্গরা নফি-ইসবাতের যিকিরের নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং এককভাবে ইল্লাল্লাহ বলার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ইবাদতের উপযুক্ত হিসেবে একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকেই মেনে নেয়া। কালেমার রুকন সম্পর্কে পৃথিবীর সমস্ত উলামায়ে কেরাম একমত।
ইল্লাল্লাহ সম্পর্কে সালাফী আলেমগণের বক্তব্য
১. সালাফি আলেমদের শিরোমুকুট মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী আল-উসুলুস সালাসা কিতাবে লিখেছেন,
ومعناها لا معبود بحق إلا الله ” لا إله ” نافياً جميع ما يعبد من دون الله .
” إلا الله ” مثبتاً العبادة لله وحده لا شريك له في عبادته كما أنه لا شريك له في ملكه
অর্থাৎ এর অর্থ হলো, আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত কোন সত্য মা’বুদ নেই। “লা ইলাহা” দ্বারা আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য সব মা’বুদকে অস্বীকার করা হয়। “ইল্লাল্লাহ” শব্দ দ্বারা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই ইবাদতের উপযুক্ত মেনে নেয়া হয়।
[আল-উসুলুস সালাসা, পৃ.৩]
২. হাফেজ হাকামী রহ. মায়ারিজুল কুবুলে লিখেছেন,
فمعنىلا إله إلا الله لا معبود بحق إلا الله ” لا إله ” نافيا جميع ما يعبد من دون الله فلا يستحق أن يعبد” إلا الله “مثبتا العبادة لله فهو الإله الحق المستحق للعبادة
অর্থ: লা ইলাহার অর্থ হলো, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বুদ নেই। “লা ইলাহা” দ্বারা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য সব মা’বুদকে নফি বা অস্বীকার করা হয়। “ইল্লাল্লাহ” দ্বারা সমস্ত ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য একথার ইসবাস বা স্বীকৃতি দেয়া হয়। সুতরাং ইল্লাল্লাহ দ্বারা স্বীকৃতি দেয়া হয় যে, ইবাদতের উপযুক্ত একমাত্র সত্তা হলেন আল্লাহ তায়ালা। [মায়ারিজুল কুবুল, খ.২, পৃ.৪১৬]
৩. সউদি আরবের বিখ্যাত মুফতি শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বায রহ. তার আদু-দুরুসুল মুহিম্মা-তে লিখেছেন,
” لا إله “نافياً جميع ما يعبد من دون الله ” إلا الله “مثبتاً العبادة لله وحده لا شريك له
লা ইলাহা দ্বারা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদত করা হয়, তাদের সবাইকে অস্বীকার করা এবং ইল্লাল্লাহ দ্বারা যাবতীয় ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য প্রতিষ্ঠিত করা, এতে তার কোন শরিক নেই।
[আদ–দুরুসুলমুহিম্বা, পৃ.৪]
কিতাবটি বাংলায় পাওয়া যাবে। লিংক
এছাড়াও শায়খ সালেহ আল ফাউজান ইয়ানাতুল মুসতাফিদ নামক কিতাবে হুবহু একই কথা বলেছেন।
শুধু ‘ইল্লাল্লাহ’ এর যিকির বৈধ হওয়ার দলীলসমূহ
১ নং দলীল : হাদীসে ও আরবী ব্যাকরণে মুবতাদা (যার সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া হচ্ছে) তাকে বাদদিয়ে শুধু সংবাদ উল্লেখ করার বহু উদাহরণ রয়েছে। যেমন, নতুন চাঁদ দেখার সময় هذا هلال (এইযে চাঁদ) এর স্থলে শুধু هلال- هلال চাঁদ-চাঁদ বলার প্রচলন চলে আসছে। হযরত বেলাল (রা.) কে কাফেররা শাস্তি দেওয়ার সময় তিনি শুধু احد-احد (এক-এক) বলে ছিলেন, অর্থাৎ আমার রব একক তাঁর কোন শরীক নেই। তদ্রুপ ‘ইল্লাল্লাহ” এর যিকির যা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা ব্যতীত জায়েয। কেননা প্রথমে অনেক বার ‘লা ইলাহা’ ‘কোন মাবুদ নেই’ বলা হয়েছে। এরপর সংবাদ দেওয়া হচ্ছে যে, ‘ইল্লাল্লাহ’ ‘আল্লাহ ছাড়া’। অর্থাৎ “আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই” একথাটিই বার-বার বলা হচ্ছে। এধরণের কথা উক্ত বাক্যগুলোর মতো নিঃসন্দেহে বৈধ।
২ নং দলীল : নামাজের মত ফরজ ইবাদতের সময় নামাজী ব্যক্তি কেরাত পাঠ করার ক্ষেত্রে বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত তেলাওয়াত করার সময় যদি (مستثنى منه) যার থেকে পরের কথাটি বাদ দেওয়া হচ্ছে সেটা উল্লেখ না করেই শুধু (مستثنى) যে হুকুমটি বাদ দেওয়া হচ্ছে। সে অংশটা তেলাওয়াত করেন তাহলে নামাজ সহী হয়ে যায়। যেমন সূরা তিনে যদি এমনভাবে পড়া হয় যে,
اِلاَّ الَّذِيْنَ اَمَنُوْا وَعَمِلُوْا الصَّلِحَاتِ فَلَهُمْ اَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُوْنَ فَمَا يُكَذِّبُكَ بَعْدُ بَالدِيْنَ اَلَيْسَ اللهُ بِاَحْكَمِ الْحَاكِمِيْنَ
অর্থ : তারা ব্যতীত যারা ঈমান এনেছেন ও সৎকাজ করেছেন, তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার। অতঃপর কেন তুমি কেয়ামতকে অস্বীকার করছ? আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বিচারক নন?
অথবা সূরা গাশিয়ায় পড়া হল, إِلاََّمَنْ تَوَلىَّ وَكَفَرَ فَيُعَذِّبُهُ اللهُ العَذَابَ الاكبر অর্থ : ঐ ব্যক্তি ব্যতীত যে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও কাফের হয়ে যায়। আল্লাহ তাকে মহা আযাব দিবেন, এধরণের আয়াত পড়ার দ্বারা যদি নামাজে কেরাতের মতো ফরজ বিধান আদায় হয় এবং এতে কোন অসুবিধা না হয় তাহলে যিকিরের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে তা পড়া বৈধ হবে।
৩ নং দলীল : আরবী ভাষার নিয়মনীতি অনুসারে দশটি জিনিস এমন রয়েছে, যেগুলোর পূর্বের আলোচনা ব্যতীত তার দিকে জমীর (সর্বনাম) ফিরানো যায়। যেমন (১) আল্লাহ তাআলা (২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (৩) কুরআন (৪) মাহবুব বা প্রেমাষ্পদ (৫) ঘোড়া (৬) উট (৭) আসমান (৮) জমিন (৯) সূর্য (১০) তরবারী। এগুলোর কয়েকটি উদাহরণ উল্লেখ করা হচ্ছে।
১নং উদাহ فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ
এ আয়াতে ‘ه’ (হু) সর্বনামটি আল্লাহ পাকের দিকে ফিরেছে। অথচ পূর্বে তাঁর কোন আলোচনা হয়নি। এ ধরণের উদাহরণ কুরআন ও হাদীসে অনেক রয়েছে।
২নং উদাহরণ :
وماعلمناه الشعر وماينبغى له
এ আয়াতে ” ه” (হু) সর্বনাম দুইটি রাসূলের দিকে ফিরেছে, অথচ পূর্ববর্তী নিকটে তাঁর কথা উল্লেখ নেই।
এ ধরণের ব্যবহার বৈধ হওয়ার কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়, আলোচ্য ব্যক্তি যেহেতু সর্বদা অন্তরে বিদ্যমান। তাই পূর্বে তাঁর কথা উল্লেখ করা ছাড়াই সরাসরি সর্বনাম ব্যবহার করা বৈধ। (দেখুন : লিসানুল আরব ও ফিকহুল লুগাত)
আরবী সাহিত্যিকগণের নিয়মানুযায়ী যদি পূর্বে আলোচনা ছাড়াই সর্বনাম ব্যবহার করা যেতে পারে। তাহলে যিকিরকারী আল্লাহর পাগল যার অন্তরে আল্লাহ সর্বদা বিদ্যমান। তিনি কেন শুধু الاالله ‘ইল্লাল্লাহ’ এর যিকির করতে পারবেন না আর তা কেন বেদআত হবে?
৪ নং দলীল :
কুরআন হাদীস ও আরবী ব্যাকরণের বহু স্থান এমন রয়েছে যেখানে বিভিন্ন শব্দকে রহিত করা হয়েছে।
যেমন কুরআন শরীফে আছে,
خيرا لكم
এখানে মূল ছিল,
انتهوا عن التثليث واقصدوا خيرا لكم এ বাক্য মূল ক্রিয়া তথা ফেয়েলانتهوا কে রহিত করে শুধু خيرا لكم উল্লেখ করা হয়েছে।
সূরা ইউসূফে আছে
يوسف اعرض عن هذا
এখানে মূলত ছিল يا يوسف اعرض عن هذا বুখারী শরীফে আছে, إياك وكرائم اموالهم অথচ এখানে মূল ক্রিয়া ফেয়েলকে রহিত করা হয়েছে ।
আরবী ব্যাকরণে আছে, زيدا ضربته যা মূলত ছিল ضربت زيدا ضربته কুরআন, হাদীস ও আরবী ব্যাকরণে এ ধরণের আরো অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে, যেখানে মূল ও বিশেষ বিশেষ শব্দকে রহিত করে তার পরবর্তী শব্দকে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাহলে যিকিরকারী আল্লাহর আশেকগণ বহুবার পূর্ণ কালিমাلااله إلاالله (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) বলার পর لااله (লা ইলাহা) কে রহিত করে শুধু الاالله (ইল্লাল্লাহ) বললে কেন দোষ হবে? বরং কুরআন, হাদীস ও আরবী ব্যাকরণে যখন বিভিন্ন স্থানে বিশেষ বিশেষ শব্দ রহিত করার বৈধতার প্রমাণ রয়েছে। তখন যিকিরের সময় আল্লাহকে অন্তরে বদ্ধমূল করার জন্য শুধু الاالله (ইল্লাল্লাহ) বলা যে, বৈধ হবে তা সুস্পষ্ট।
“ইল্লাল্লাহ” যিকির সম্পর্কে হাকীমুল উম্মতের ফতোয়া
৫ নং দলীল : হাকীমূল উম্মত মুজাদ্দেদে মিল্লাত হযরত মাওলানা শাহ আশরাফ আলী থানভী (রহ.) ‘ইমদাদুল ফতোয়া’ নামক কিতাবে الاالله (ইল্লাল্লাহ) যিকির বৈধ হওয়ার প্রমাণ পেশ করে বলেন, হাদীসে مستثنى منه অর্থাৎ যার থেকে পরের কথাটি বাদ দেওয়া হচ্ছে। সেটা উল্যেখ না করেই مستثنى অথাৎ যে হুকুমটি বাদ দেওয়া হচ্ছে শুধু সেটা উল্লেখ করার প্রমাণ রয়েছে। مستثنى منه উহ্য রাখার প্রমাণ, বুখারী শরীফে ১খ, ২২পৃ. রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ঘটনায় الاالاذخر-الاالاذخر বলেছেন। অর্থাৎمستثنى منه উহ্য রেখে শুধু مستثنى উল্লেখ করেছেন। (আর আমাদের আলোচিত মাসআলায়ও مستثنى منه -لااله (লা ইলাহা) উহ্য রেখে শুধু مستثنى – الاالله (ইল্লাল্লাহ) উল্লেখ করা হয়।
সুতরাং শুধু الاالله (ইল্লাল্লাহ) এর যিকির বৈধ। আর এখানে مستثنى منه গোপন রাখার ব্যাপারে দুই প্রকার দলীল রয়েছে (১) যিকিরকারী প্রথমে পূর্ণ কালিমা যিকির করার পর শুধু الالله (ইল্লাল্লাহ) এর যিকির করেন। সুতরাং الاالله (ইল্লাল্লাহ) যিকিরের সময় পূর্বে উল্লেখিত لااله (লা-ইলাহা) এর উপর ভিত্তি করেই তা বলতে থাকেন।
প্রত্যেক মুসলমান সর্বদা গায়রুল্লাহকে দূর করে এক আল্লাহকে অন্তরে প্রতিষ্ঠা করেন। সুতরাংالاالله (ইল্লাল্লাহ) বলার সময় لااله (লা ইলাহা) অন্তরে বিদ্যমান থাকে। এ দিকে লক্ষ্য করেই الاالله (ইল্লাল্লাহ) এর যিকির বৈধ বলা হয়।
(ইমদাদুল ফতোওয়া ৫ খ, ২২৩ পৃ,)
সারকথা : হাকীমুল উম্মত মুজ্জাদ্দেদে মিল্লাত হযরত মাওলানা শাহ আশরাফ আলী থানভী (রহ.) ও হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণ করলেন যে,শুধু الاالله ‘ইল্লাল্লাহ’ এর যিকির করা বৈধ।
“ইল্লাল্লাহ” যিকির সম্পর্কে শায়খুল হাদীস জাকারিয়া (রহ.) এর ফতোয়া ।
শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা মুহাম্মদ জাকারিয়া (রহ.) বলেন, “আত-তাকাশশুফ” নামক কিতাবের ৭০২ পৃ. আছে, শুধু إلاالله “ইল্লাল্লাহ” এর যিকিরের ব্যাপারে অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন যে. إلاالله “ইল্লাল্লাহ” এর অর্থ : আল্ল্ল্লাহ ছাড়া। এর পূর্বে ও পরের সাথে কোন সম্পর্ক না থাকায় কথাটি অর্থবহ নয়। এমন যিকিরে কোন নেকী হয় না। সুতরাং তা অর্থহীন ও বেহুদা। তাই এ নিরর্থক কাজ কেন করা হয়? এই প্রশ্নের জবাব নিম্নরূপ।
৬ নং দলীল : (১) বোখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীস যা মেশকাত শরীফের ২৩৮ পৃ. আছে। মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবায় বললেন, মক্কা শরীফের ঘাস কাটা হারাম। তখন হযরত আব্বাস (রা.) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! الاالاذخر ইজখির ঘাস ছাড়া। তখন তিনি বললেন, الاالاذخر ইজখির ঘাস ছাড়া। এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল, কোন আলামত পাওয়া গেলে পূর্বে বর্ণিত কোন বাক্যের একাংশের উচ্চারণ দ্বারা সে পূর্ণবাক্য বুঝানো বৈধ হয়। আর “ইল্লাল্লাহ” এর ক্ষেত্রে ঠিক তেমনি হয়েছে। কেননা এর পূর্বে দু’শবার “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর পূর্ণবাক্যের যিকির করা হয়েছে। আর মু’মিনের আকীদা ও তাঁর অন্তরে সর্বদা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” থাকে। এর উপর ভিত্তি করে শুধু “ইল্লাল্লাহ” বার-বার বললে ক্ষতি কোথায়?
৭ নং দলীল : (২) প্রথমে যখন দু’শবার لاإله إلاالله “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর যিকির করা হল বা সে কালেমা বলা হল তখন পরবর্তী চার’শ বার সে لاإله إلاالله “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর একাংশ “ইল্লাল্লাহ” বলা হচ্ছে। কেমন যেন তাতে হুবহু সে কালিমাই বলা হচ্ছে। প্রথম অংশ অন্তরে গোপন থাকে আর দ্বিতীয় অংশ যবানে প্রকাশ পায়। তাই প্রথম দু’শ বার “লা-ইলাহা” এর সাথে দ্বিতীয় বার শুধু “ইল্লাল্লাহ” শব্দটিকে যোগ করে ৪০০ বার বলা হল এবং প্রত্যেক বারই তার সাথে লা-ইলাহা অন্তরে গোপন রইল এতে দোষ কি হতে পারে?
“ইল্লাল্লাহ” এর যিকির সম্পর্কে দারুল উলূম দেওবন্দের ফতোয়া
৮ নং দলীল : শুধু ‘ইল্লাল্লাহ’ শব্দের যিকির করা মাশায়েখদের নিকট যে প্রচলিত আছে তা বৈধ। কেননা এর দ্বারা (নফী) না করার পর (ইসবাত) হ্যা করা উদ্দেশ্য। এটা এ জন্য যে, মাশায়েখগণ প্রথমে অনেকবার পূর্ণ কালিমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর যিকির করেন। তারপর ‘লা-ইলাহা’ নফীকে বাদ দিয়ে শুধু ইছবাত ‘ইল্লাল্লাহ’ এর যিকির করেন। আর এটা স্পষ্ট যে, শুধু الاالله ‘ইল্লাল্লাহ’ এর যিকির দ্বারা উদ্দেশ্য হয়, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই।
(ফতোয়া দারুল উলূম দেওবন্দ ৪ খ, ৬৬ পৃ,)
যিকিরের একই শব্দ বার-বার বলার বিধান
আর যে সমস্ত শব্দকে গুরুত্বের জন্য বার’বার আনা হয়, তাকে বার’বার আনার কোন সীমারেখা থাকে না। বিষয়টা যত গুরুত্বপূর্ণ হবে তাকে ততবেশী উল্লেখ করা হবে। যেমন অনেক বর্ণনায় এসেছে যে, কোন কোন বিষয়ের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও কথাটি বার-বার বলতেন।
যেমন,
عن أبي بكرة عن أبيه رض قال رسول الله صلي الله عليه و سلم ألا أنبئكم أكبرالكبائرثلاثا فما زال يكررها حتى قلنا ليته سكت (بخاري شريف رقم الحديث ২৬৫৪)
অর্থ : হযরত আবু বাকরাহ (রা.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গোনাহ সম্পর্কে সর্তক কবর না? কথাটি তিনি তিন বার বললেন, এমনকি আমরা (মনে মনে) ভাবছিলাম, হায় তিনি যদি চুপ করতেন। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং ২৬৫৪)
এ জাতীয় আরো অনেক হাদীস আছে। হযরত উসামা (রা.) এক ব্যক্তিকে মুনাফেক মনে করে হত্যা করে দিলেন। ঐ ঘটনার মধ্যে এটাও উল্লেখ আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একই কথা বারবার বলছিলেন, কেয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি যখন “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” নিয়ে আসবে তখন তুমি কি উত্তর দিবে? (মুসলিম শরীফ, মেশকাত শরীফ ২৯৯ পৃ.)
মেশকাত শরীফের কিতাবুল জেহাদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আরো একটা জিনিস রয়েছে যা দ্বারা জান্নাতে আল্লহ পাক বান্দার এমন একশত মর্তবা বৃদ্ধি করবেন। যার প্রতিটির দূরত্ব হল আসমান ও জমিনের দূরত্বের ন্যায়। তখন জনৈক সাহাবী বললেন, ঐ জিনিসটা কি? উত্তরে তিনি বললেন,
الجهاد فى سبيل الله الجهاد فى سبيل الله الجهاد فى سبيل الله (مشكوة شريف ج২ ص ৩৩৪)
অর্থ : আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ, আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ, আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ, তিনবার বললেন।
যারা হাদীস পড়েন ও পড়ান তাঁদের কাছে এটা অস্পষ্ট নয়। শত-শত হাদীসে একই শব্দকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বার-বার বলেছেন।
সুতরাং এই হাদিসের দ্বারা প্রমাণিত হলো অন্তরে কোন কথা বসানোর জন্য একই শব্দ বার বার বলাতে কোন অসুবিধা নেই। এ বিষয়ে আরবীতে একটা প্রবাদ রয়েছে, إذا تكرر الكلام تقرر في القلب একটি শব্দ যখন বার বার বলা হয়, তা অন্তরে গেথে যায়।
বি: দ্র: কিছু দলিল সংগৃহীত।